গল্প- কুঁড়ে ঘরের বিবাহ বার্ষিকী

কুঁড়ে ঘরের বিবাহ বার্ষিকী
– জয়তী মিত্র

চারশো টাকা দিয়ে ফুটপাত থেকে একটা ছাপা শাড়ি কিনে চাঁপাকে দিয়ে দুলাল বললো, এই শাড়িটা তোমার জন্য নিয়ে এসেছি দেখ তো পছন্দ হয়েছে কি না। স্বামীর হাতে হলুদ রঙের ছাপা শাড়িটা দেখে আনন্দে জড়িয়ে ধরলো দুলালকে।গায়ে ফেলে শাড়িটা উল্টে পাল্টে দেখে খুব খুশি হয়ে চাঁপা বললো, খুব পছন্দ হয়েছে। দুলাল বললো, আজকে আমাদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকী। আজকের দিনে তুমি আমার এই কুঁড়ে ঘরে এসেছিলে।
দুলাল একজন দিন মজুর। দিন মজুরী করে দিনের বেলায় আর রাতে খাবারের দোকানে কাজ করে কিছু রোজগার করে তাই দিয়ে ডাল, ভাত জুটে যায়। আর চাঁপা খুব লক্ষ্মীমন্ত মেয়ে। ঘর সংসার সুনিপুণ হাতে সামলে রাখে। অভাবের সংসারে টাকা না থাকলেও ভালোবাসার অভাব নেই।
এত ভালো একজন ভালোবাসার মানুষ আসবে তার জীবনে একথা কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবেনি চাঁপা। সেই ছোট বেলায় বাবা, মাকে হারিয়ে মামার বাড়িতে ঠাঁই হয়েছিল। মামা মানুষটি খুব একটা খারাপ ছিল না। চাঁপাকে নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসতো। কিন্তু মামী তাকে কোনোদিন মেনে নেয় নি। দিনের পর দিন মামীর লাঞ্ছনা, কটূক্তি সহ্য করতে না পেরে একদিন চাঁপা জলে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে নিজেকে শেষ করে দিতে গিয়েছিল।
দুলাল সেই সময় সেখানে স্নান করতে গিয়ে চাঁপাকে উদ্ধার করে প্রাণে বাঁচায়। তারপর সুস্থ হলে চাঁপার জীবনের দুঃখের কাহিনী শুনে তাকে বিয়ে করতে চায়। দুলালও খুব একা ছিল বাবা, মা কেউ ছিল না। এক দিদি ছিল, সে ভাইয়ের কোনো খোঁজ নিত না।

মন্দিরে গিয়ে চাঁপাকে বিয়ে করে নিয়ে এসে তার ছোট কুঁড়েঘরে তোলে দুলাল। দুলালের শূন্য জীবনটাও ভালোবাসায় ভরিয়ে দেয় চাঁপা।

শাড়িটা হাতে নিয়ে আলনায় গুছিয়ে রাখলো চাঁপা, তারপর একটা পাঞ্জাবী স্বামীর হাতে দিয়ে বললো, এটা তোমার জন্য কিনেছি, তুমি পাঞ্জাবী পড়তে তো খুব পছন্দ করো তাই আজ এটা তোমার উপহার।
কিন্তু চাঁপা তুমি টাকা কোথায় পেলে?
চাঁপা বললো, পাশের বাড়ির বৌদির কাছে কদিন হোম ডেলিভারির রান্নার কাজে সাহায্য করে দিয়েছি, বৌদির রান্নার লোক ছুটি নিয়েছিল। বৌদির কাছে কাজ করে টাকা পেয়ে কিনেছি। দুজন দুজনের কাছে উপহার পেয়ে ভীষণ খুশি হল। এই ভালোবাসা টাকা দিয়ে কেনা যায় না।
চাঁপা বললো, উপহার তো হলো,তাহলে খাওয়া কি হবে? ঝোলা থেকে বেগুনি, আলুর চপ আর এক প্যাকেট মুড়ি বের করে চাঁপার হাতে দিয়ে বললো, তোমার পছন্দের আলুর চপ আর বেগুনি।
চাঁপা একবাটি মুড়ি মেখে নিয়ে এলো, সাথে দু’কাপ চা। দুলাল বললো, তোমার হাতে যাদু আছে, এত সুন্দর চা বানাও তুমি, এক কাপেই সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। স্বামীর প্রশংসায় চাঁপার চোখে মুখে খুশির রেশ ছড়িয়ে পড়লো।
কুঁড়ে ঘরের ফাঁক দিয়ে তখন এক টুকরো চাঁদের আলো ঘরে ছড়িয়ে পড়লো। চাঁদের আলোয় দুজনের বিবাহ বার্ষিকী যাপন একটা আলাদা আনন্দের রেশ এনে দিল দুজনের মনে।

Loading

Leave A Comment